বদলে যাওয়া শহরের গল্প

 

বদলে যাওয়া শহরের গল্প

১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৭৪ দশমিক ৬ কোটি। তবে ২০২৩ সালে এসে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি। অবাক হলেও সত্য- অবিশ্বাস্যভাবে কয়েক দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে নগরায়ণের পরিধিও। বদলে গেছে গোটা শহরের চেহারা। বদলে যাওয়া এমন শহরের গল্প নিয়ে আজকের রকমারি...

লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্র

উন্নত প্রযুক্তি, জমকালো ভবনের শহর

লস অ্যাঞ্জেলেস এমন একটি শহর যা সারা বিশ্ব থেকে দর্শকদের আকর্ষণ করে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আধুনিক শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। এর আনুষ্ঠানিক নাম কাউন্টি অব লস অ্যাঞ্জেলেস; যা অঙ্গরাজ্যটির অন্যতম প্রধান শহর। ১৮৫০ সালে রাজ্য গঠনের সময় শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে তৎকালীন ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেস; এখনকার মতো উন্নত ছিল না। ১৮৫১-১৮৫২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস নেভাদা রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ২০২০-এর আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ১০০ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। এর জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১টি রাজ্যের তুলনায় বেশি। লস অ্যাঞ্জেলেস প্রশান্ত মহাসাগরের ৭০ মাইল (১১০ কিলোমিটার) উপকূল সীমানায় রয়েছে পর্বত, উপত্যকা, বন, দ্বীপ, হ্রদ, নদী ও মরুভূমি।

১৯৯০ দশকের ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেস ছিল অনেকটা সাদামাটা একটি শহর। তবে কালে কালে এর আদলে বেশ পরিবর্তন এসেছে। আজকের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরটি কেবল প্রযুক্তির উন্নতি এবং জমকালো ভবনের জন্মই দেয়নি বরং দূষণ মোকাবিলার উন্নত উপায়ও খুঁজে বের করেছে। গ্লিটজ এবং গ্ল্যামার থেকে শুরু করে মালিবুর আদিম সৈকত পর্যন্ত এটি আমেরিকার বিনোদনের রাজধানী। শহরটির মধ্যে প্রায় ১৭টি পর্যটন স্থান- সমগ্র বিশ্বের দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। কী নেই এখানে! গেটি সেন্টার, গ্রিফিথ পার্ক এবং গ্রিফিথ অবজারভেটরি, ডিজনিল্যান্ড রিসোর্ট, হলিউড, পিটারসেন অটোমোটিভ মিউজিয়াম, সান্তা মনিকা, ভেনিস বিচ, বেভারলি হিলস, মালিবুর সমুদ্র সৈকত এবং লং বিচসহ আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান এখানে আগত দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়।

ইস্তাম্বুল, তুরস্ক

দুই মহাদেশের একটি শহর

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শুধু একটি শহরই নয়; বরং বলা চলে এক কিংবদন্তি। এশিয়া ও ইউরোপকে একত্রে বলা হয় ইউরেশিয়া, যার বিভাজন রেখা হলো বসফোরাস, আর এই বরফোরাস প্রণালির অবস্থান প্রাচীন ইস্তাম্বুল শহরে। এটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি শহর; যা ইউনেস্কোর তালিকায় ইউরোপের রাজধানী শহরের মর্যাদা পেয়েছিল ২০১০ সালে। এটি হচ্ছে সবচেয়ে জনবহুল ইউরোপীয় শহর এবং বিশ্বের ১৫তম বৃহত্তম শহর। এর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ যা তুরস্কের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৯ ভাগ। পরিকল্পিত শহরটি দেখতে স্বপ্নের জগতের মতো। ইস্তাম্বুলের ইতিহাসে অসংখ্য সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটে। একসময় এই শহরই ছিল তুরস্কের রাজধানী। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে বদলে যায় রাজধানী। শুধু তাই নয়, একসময় ইস্তাম্বুলই ছিল পৃথিবী শাসনকারী বাইজানটাইন ও পরবর্তীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের রাজধানী। এটি প্রাচীন এবং পুরনো নগরী। স্মৃতিতে গাঁথা ছোট্ট শহর, স্মৃতির আবছা আয়নায় দেখা দুরন্ত নদী বসফোরাস আর সেই নদীর কূল ছাপিয়ে অসংখ্য মানুষ, তাদের জীবনযাপন, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক আচার এবং মূল্যবোধে ঢাকা এক বিস্মৃত জনপদ। এই শহরের গ্র্যান্ড বাজার এশিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিশাল বাজার। যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিক রুচির এক অপরূপ সমন্বয় ঘটেছে। মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ এখানে স্পষ্ট অনুভব করা যায়। ছোট ছোট দোকানগুলোর পণ্যদ্রব্যে তা ভরপুর। কী নেই এখানে? সোনাদানা, মণিমুক্তা থেকে জামা-কাপড়-কার্পেট, চামড়াজাতীয় জিনিস, হাতের চুড়ি, খোঁপার কাঁটা সবই আছে। ঐতিহাসিক হিপোড্রোম বা সুলতান আহমদ স্কয়ার ইস্তাম্বুলের এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।

সাংহাই, চীন

এটি কেবল চীনের নয়, সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম শহর

পৃথিবীর দীর্ঘতম উঁচু আধুনিক স্থাপত্যের কয়েকটির দেখা মিলবে এই শহরে। ওরিয়েন্টাল পার্ল রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন টাওয়ার বিশ্বের ষষ্ঠতম উঁচু টাওয়ার। যেটি হুয়াংপু নদীর তীরে অবস্থিত। ৪৬৮ মিটার উঁচু এই বিশাল টাওয়ার স্থাপিত হয়েছে ১১টি গোলাকার কাঠামোর ওপর। এই টাওয়ারে তিনটি ফ্লোর রাখা হয়েছে শহরের প্যানোরামা ভিউ দেখার জন্য

চীনের সবচেয়ে আধুনিক শহর সাংহাই। এটি কেবল চীনের নয়, সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম শহর। এর জনসংখ্যা ২ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি। যদিও গত এক দশকে চীনের অনেক শহর উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তন হয়েছে। তবে শহুরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাংহাই সিটি অন্য সব শহর-নগরকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আগের দিনে সাংহাই নদীতে ছিল নৌকার আধিপত্য। তবে আজকের সাংহাই বেশ পরিপাটি এবং কম কোলাহলপূর্ণ একটি শহর হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের ধনকুবেরদের দ্বিতীয় আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত সাংহাই নগরী দ্রুত বিকাশের জন্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। গত এক দশকে এই শহরে সাংহাই টাওয়ার, সিনার মাস সেন্টার, সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার টাওয়ার এবং গ্রিনল্যান্ড বুন্ড টাওয়ারের মতো বিশাল ভবনগুলোর ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে আধুনিক স্থাপনায় পরিবর্তিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্কুল-কলেজ এবং আধুনিক আবাসন ব্যবস্থার কারণে এটি বিত্তশালীদের কাক্সিক্ষত শহর।

প্রাচীন এই শহরের অমূল্য সব ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে সাংহাই মিউনিসিপ্যাল হিস্টোরি জাদুঘরে। অসাধারণ রকমের আধুনিক কায়দায় সাজানো স্পেস ক্যাপসুলে গিয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন ছায়াপথের সব রহস্যময় দৃশ্যের। পুডংয়ের সাংহাই ডিজনিল্যান্ড পার্ক পৃথিবীর ষষ্ঠ ও সবচেয়ে নতুন ডিসনি পার্ক। এই পার্কের ভিতরে রয়েছে ছয়টি থিমে নির্মিত আলাদা আলাদা বিভাগ- মিকি এভিনিউ, গার্ডেন অব ইমেজিনেশন, ফ্যান্ট্যাসিল্যান্ড, অ্যাডভেঞ্চার আইল, ট্রেজার কোভ এবং টমোরোল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যান্য ডিজনিল্যান্ড থেকে সাংহাই ডিজনিল্যান্ড কিছুটা আলাদা। কারণ এটি তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ চীনা সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে। সাংহাই ডিজনিল্যান্ড পার্কে গেলে অবশ্যই ট্রেজার কোভের পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : ব্যাটেল ফর দ্য সাঙ্কেন ট্রেজার ঘুরে দেখবেন। সাংহাই অ্যাক্রোব্যাটিক ট্রুপের অবাক করা সব শারীরিক কসরতের জন্য সাংহাইয়ের বিশেষ সুনাম রয়েছে।

দুবাই, আরব আমিরাত

৫০ বছরে জেলে পাড়া থেকে উন্নত নগরীতে দুবাই

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে প্রধান, নিরাপদ এবং বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই সিটি। পারস্য উপসাগরের বাণিজ্য বন্দর হিসেবে দুবাই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। তবে এক সময় এটি ছিল কেবল একটি জেলেপাড়া। ১৮২২ সালে বনি ইয়াস উপজাতির প্রায় ৭০০-৮০০ সদস্যের একটি শহরে পরিণত হয় দুবাই। বিগত ৫০ বছরে সাধারণ মাছ ধরার গ্রাম থেকে দুবাই বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

১৯৬০-এর দশকে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। সেই থেকে দ্রুত বদলে যেতে থাকে আরব আমিরাতের রাজধানী শহরটি। গত দুই দশকে শহরটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত দুবাইয়ের আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। শহরের সাম্প্রতিক সংযোজনের মধ্যে আছে ভবিষ্যতের জাদুঘর, দুবাই ক্রিক হারবার কমপ্লেক্স, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার এবং মোহাম্মদ বিন রশিদ লাইব্রেরি।

ব্যাংকক সিটি, থাইল্যান্ড

সেই ব্যাংকক এখন চমকপ্রদ নগরী

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। শহরটি মধ্য থাইল্যান্ডের চাও ফ্রেয়া নদীর বদ্বীপে অবস্থিত। যেখানে ৮০ লাখেরও বেশি লোক বসবাস করেন; যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। সংস্কৃতির নানা উপাদানে পরিপূর্ণ এ শহরে ঐতিহ্যের সঙ্গে রোজই দেখা হয় আধুনিকতার। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যাংকক আর আজকের দিনের ব্যাংককের মধ্যে বিস্তর ফারাক। যার অনন্য উদাহারণ- ওপরের ছবির মধ্যে সময়ের পার্থক্য। যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়ে থাকতে পারে। সেই শহর বদলে আজ আধুনিক নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরজুড়ে আধুনিকতার ছোঁয়া, উঁচু দালানকোঠা আর যাতায়াতের আধুনিক মাধ্যমগুলো জনজীবনে এনেছে বৈচিত্র্য। এর বাইরেও শহরের শপিং কমপ্লেক্স আর বিনোদন পার্কগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও বিমোহিত করে। তবে শহরটি অনেক বদলেছে। ঐতিহ্য ও প্রাচীনকালের কিছুটা ছোঁয়া তার কেন্দ্রে রেখেই গেছে। থাইল্যান্ডের ৯৫ শতাংশ মানুষই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তাই পুরো ব্যাংককজুড়ে মন্দিরের ছড়াছড়ি। ব্যাংককের বড় আকর্ষণ  এখানকার ভাসমান বাজার বা ফ্লোটিং মার্কেটগুলো। চমৎকার নৌকা ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে উৎপাদিত সবজি ও ফল কেনা যায়। এই শহরের রাতের জীবন নিঃসন্দেহে রহস্য-রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ। বাজারগুলো শুধু সামাজিক মিলনমেলাই নয়, থাই সংস্কৃতির অন্যতম অংশও বটে। এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গ্র্যান্ড প্যালেসে জড়িয়ে আছে থাই বহু ইতিহাস। এক সময় রত্তনাকোসিন রাজত্বের রাজা প্রথম রামা থেকে পঞ্চম রামার বাসস্থান ছিল এটি। থাইল্যান্ডের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে ব্যাংকক এনশিয়েন্ট সিটি বা প্রাচীন শহরে। ব্যাংককের সেরা পর্যটন এলাকার চাও ফ্রায়া নদী।

 

সিঙ্গাপুর সিটি, সিঙ্গাপুর

ছবি দেখে খুব কম চেনা যায় মনে হচ্ছে দুটি ভিন্ন শহর

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম সিঙ্গাপুর। আধুনিক সিঙ্গাপুরের ইতিকথা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে ১৪ শতকে সিঙ্গাপুর দ্বীপে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবসার বন্দোবস্ত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর জাপান সাম্রাজ্যের দখলে ছিল। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় সিঙ্গাপুর। অত্যধিক বেকারত্ব আর আবাসন সংকটের মুখোমুখি হয়ে সিঙ্গাপুর ১৯৭০ সালের শেষ দিকে একটি আধুনিকীকরণ কর্মসূচি শুরু করে। কর্মসূচির মধ্যেকুুুউৎপাদনশিল্প প্রতিষ্ঠা, বসবাসযোগ্য বৃহত্তর হাউজিং এস্টেটের বিকাশ ও জনশিক্ষা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে দেশটি এগিয়ে যায় আধুনিক থেকে উচ্চ আধুনিকের দিকে।

 

১৯৯০ সালের মধ্যে দেশটি উন্নত অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শক্তিশালী লিংক হিসেবে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধিশালী দেশ হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুর শহরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে- ত্রিমুখী মেরিনা বে স্যান্ডস (২০১০ সালে), পদ্ম আকৃতির শিল্প ও বিজ্ঞান জাদুঘর (২০১১ সালে), উপসাগরের প্রাকৃতিক উদ্যান (২০১২ সালে), উদ্ভিদ বোঝাই ওসিয়া ডাউনটাউন (২০১৬ সালে) এবং ক্যাপিটাস্প্রিয় (২০২১ সালে)-এর স্কাই গার্ডেন এক দশক আগেও ছিল সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন। শহরের ঐতিহাসিক ভবনের মধ্যে সংস্কার করা ফুলারটন হোটেলও রয়েছে।

 

মস্কো, রাশিয়া

সোভিয়েত আমলের মস্কো এখন আধুনিক শহর

ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর মস্কো। জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ; যা রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ। শহরটির বয়স প্রায় ৯০০ বছর, তৈরি হয়েছিল ১১৪৭ সালে। তবে বড় কথা হলো- সহস্রাব্দ-প্রাচীন ইতিহাস প্রায় জ্যান্ত অবস্থাতেই রয়েছে এখানে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক রেড স্কয়ার আর ক্রেমলিন যেমন আলোকিত, তেমনি আলোর বন্যায় ভেসে থাকায় দেখায় অনেক বেশি প্রাণবন্ত। নিঃসন্দেহে এটাই মস্কোর ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র। ইতিহাস জাদুঘরের ঠিক পাশে তৈরি করা হয়েছে কাজান গির্জা। সপ্তদশ শতকের প্যাট্রিয়ার্কস প্যালেস, আর্কেঞ্জেল ক্যাথিড্রাল, আর্মারি বা অস্ত্রাগার, লেনিনের সমাধি এবং কেজিবির সদর দফতর লুবিয়াঙ্কা আজও আছে আগের মতোই।

 

সেন্ট বেসিলস ক্যাথিড্রালের গম্বুজ এবং ভøাদিমির লেনিনের গ্রানাইট স্মৃতিসৌধ আজও অমলিন। যদিও আজ শহরের চেহারা বদলেছে। ‘ভবিষ্যতের মশকোভাইটস’ এবং ডিজিটাল হাউস আর আধুনিক সুউচ্চ ভবনগুলো পাল্টে দিয়েছে মস্কোভা নদীর তীরঘেঁষা শহরকে।  আধুনিক মস্কোর এক একটা স্টেশন যেন এক একটা শিল্পকর্ম। কোনোটায় শ্বেতপাথর কিংবা সোনার কারুকাজ, কোনোটায় ফ্রেস্কো। ১৬টি রুট ও ২২৪টি স্টেশনে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। সোভিয়েত আমলের মস্কো আজ ঝলমলে শহর।

 

ফোর্তালেজা, ব্রাজিল

বদলে গেছে সৈকতের ফোর্তালেজা

ফোর্তালেজা আশ্চর্যজনকভাবে বড় এবং বিস্তৃত একটি  নগরায়ণ। এটি ব্রাজিলের বৃহত্তম শহরগুলোর অন্যতম। শহরটি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে অবস্থিত সিয়ারা রাজ্যের রাজধানী। শহরটি পাজেউ নদীর মুখে একটি অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির উপকূলরেখায় অবস্থিত। শুধু তাই নয়, এটি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এটি ব্রাজিলের চতুর্থ বৃহত্তম শহর, ২০২৩ সালের আদমশুমারিতে ২৭ লাখের কিছু বেশি। ফোর্তালেজার উৎপত্তি হয়েছিল একটি পর্তুগিজ দুর্গ-সংলগ্ন একটি ছোট গ্রাম (ভারতীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে নির্মিত)। ১৬০৩ সালে এই অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়েছিল। ১৬১২ সালে ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর মার্টিন্স সোয়ারেস মোরেনো সাও এই শহরের দুর্গ প্রসারিত করেন। কালে কালে নানা যুদ্ধ বিগ্রহ দেখেছে এই নগরী। ১৮২৩ সালে শহরের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং ফোর্তালেজা নোভা দে ব্রাগানসা নামে রাজধানী হয়। ১৮২৪ সালে কনফেডারেশনের বিপ্লবীরা শহরটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। শহরটি ১৯৩০-এর দশকে মেসেজানা এবং পোরাঙ্গাবাসহ বেশ কয়েকটি নতুন জেলা লাভ করে। ১৯৫৪ সালে শহরের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল যা ইউনিভার্সিডে ফেডারেল ডো সিয়ারা (ইউএফসি)। ১৯ শতকে ফোর্তালেজা তুলাশিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হয়। সেই থেকে ধীরে ধীরে শহরটি বদলে যেতে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে সিয়ারা সৈকতগুলো ছিল জঙ্গলে ঠাসা। দূরে খানিকটা বসতি দেখা গেলেও উন্নয়নে পিছিয়ে ছিল শহরটি। কিন্তু আজকের ফোর্তালেজা ব্রাজিলের উন্নত শহরের অন্যতম; যা ব্রাজিলের মানুষের জন্য তো বটেই; বিদেশি পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয়। এখানকার সৈকত, বিনোদনের পরিবেশ এবং দর্শনীয় ছোট ছোট সৈকত এবং মাছধরার গ্রামগুলো আগত দর্শনাথীদের বেশ উৎসাহিত ও প্রাণচঞ্চল করে।

লেখাঃ আবদুল কাদের।

সূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন/সংবাদ পত্র। 

 

 

Previous Post Next Post
atOptions = { 'key' : 'ff715ba50c059c742bfea5af35b4aa55', 'format' : 'iframe', 'height' : 50, 'width' : 320, 'params' : {} };